শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:০১ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্কঃ পঞ্চগড়ে মাত্র ২২ দিনের মধ্যে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ১১ দিন অন্তর অন্তর মারা যান তারা। তাদের একের পর এক মৃত্যুতে গ্রাম জুড়ে বইছে আতঙ্ক আর শোক। দিশেহারা হয়ে পড়েছে পরিবারটিও।
ঘটনাটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা সেনপাড়া এলাকার।
মৃত তিনজন হলেন ওই এলাকার মৃত- অন্যপ্রসাদ রায়ের বড় ছেলে বিমল চন্দ্র রায় (৩০), মেঝো ছেলে রতন চন্দ্র রায় (২৭) এবং বিমলের কাকাতো ভাই কৃষ্ণ চন্দ্রের ছেলে মিঠুন চন্দ্র রায় (১৬)। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জুন অসুস্থতা অবস্থায় মারা যায় মিঠুন চন্দ্র রায়। তার শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিলো ২০ জুন; কিন্তু ১৯ জুন রাতেই মারা যান মিঠুনের বাবার কাকাতো ভাই রতন। রতনও অসুস্থতা বোধ করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। রতনের শ্রাধ্যের দিনক্ষণ ছিলো ১ জুলাই। কিন্তু ৩০ জুন রাতে আকস্মিকভাবে মারা যান বিমল। ফলে ছোট ভাইয়ের শ্রাধ্য অনুষ্ঠান না করেই শৎকার করা হয় এই বড় ভাইকে। এদিকে, একে একে তিনজনের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন বিমলের নববধু অষ্টমনি রানী। দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন বলে বিলাপ করছেন রতনের স্ত্রী চিত্রা রানী। মাত্র ৮ মাস আগে স্বামীকে হারানোর পর এবার কয়েকদিনের ব্যবধানে দুই ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক মা জয়ন্তি রানীও। এছাড়া স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
মিঠুনের বাবা কৃষ্ণ চন্দ্র জানান, তার ছেলে এবার স্থানীয় বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়তো। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো তার। পড়ালেখা করে ছেলে অভাবের সংসারে সহায়ক হবে এমন প্রত্যাশা ছিলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বিমল এবং রতনের ছোট ভাই জ্যোতিষ চন্দ্র রায় বলেন, আমার বাবা মারা যাবার এখনো এক বছর হয়নি এর মধ্যেই দুই ভাইকে হারাতে হলো। আমরা অভিভাবক শূণ্য হয়ে গেলাম। সামনে কিভাবে পরিবার চালাবো তাও ভেবে পাচ্ছিনা। এক ভাই বিয়ে করেছে এখনো বছর পূরেনি, আরেক ভাইয়ের ছোট ছোট দুই সন্তান আছে। জানিনা ভবিষ্যত কি হবে। তবে আর কাউকে হারাতে চাইনা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, এক পরিবারের একে একে তিনজনের মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা। শুনেছিলাম রতনের কিডনিজনিত সমস্যা ছিলো। পারিবারিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় সঠিক চিকিৎসা করতে পারেনি হয়তো। আমি ব্যক্তিগতভাবে পরিবারটির খোঁজ খবর নিচ্ছি। পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও চান তিনি।
এ বিষয়ে বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোলেমান আলী বলেন, খবর নিয়ে জেনেছি যারা মারা গেছেন তারা রোগাক্রান্ত ছিলেন। কয়েকদিনের ব্যবধানে তিনজনের মৃত্যুতে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তারা যদি মনে করে তাদের কোন বংশানুক্রমিক রোগ রয়েছে, তাহলে প্রয়োজনে মেডিক্যাল বোর্ড গঠণ করে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া ওই পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতারও আশ্বাস দেন ইউএনও।
Leave a Reply