বুধবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:১২ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্কঃ প্রতিটি সচেতন মুসলিম অভিভাবক তার সন্তানের বিবেক-বুদ্ধি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দ্বীনি শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা দিয়ে থাকেন। সন্তান যখন আধো আধো কথা বলা শুরু করে বা তারও আগে বাবা মা সন্তানকে আল্লাহ-আল্লাহ, আব্বু, আম্মু ইত্যাদি শব্দ সম্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে আদর-সোহাগ করতে থাকে। তখন থেকেই প্রথমে তাওহিদের কালেমা- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ শিক্ষা দেওয়া জরুরি। তখন থেকেই সন্তান এগুলো শিখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এটা হলো সন্তানের জন্য বাবা-মার প্রাথমিক বুনিয়াদি শিক্ষা। সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের আরও যেসব করণীয় রয়েছে, তাহলো-
. সন্তানকে ভালো ও মন্দের শিক্ষা
সন্তান একটু বড় হলেই তাকে সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎকাজে বাধা দেওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। হজরত লোকমান নিজ সন্তানকে নামাজের পরই এ বিষয়ে নসিহত করেছেন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেউ অন্যায় করছে, তাতে মুখ বুঝে নিরব থাকার কোনো সুযোগ নেই। অন্যায় কাজের প্রতিবাদ না করা ঈমানহীনতার শামিল।
. বিপদে ধৈর্যধারণের শিক্ষা
নামাজ পড়া, পর্দা করা, সৎকাজ ও অসৎকাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে গিয়ে যদি কেউ বিপদের সম্মুখীন হয় তাকে ধৈর্যধারণ করার শিক্ষা দিতে হবে। তবেই কৈশোর থেকে ধৈর্যশীল ও সাহসী হওয়ার শিক্ষায় নিজেকে গড়তে পারবে।
. অহংকার ও গর্ব না করার শিক্ষা
কোনোভাবেই অহংকার ও গর্বের শিক্ষা দেওয়া যাবে না। কৈশোর থেকে এ বিষয়ে অবগত করতে হবে। এগুলো করা যাবে না। কেননা মহান আল্লাহ বলেন-
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ
অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৮)
. মধ্যমপন্থা অবলম্বন শেখাতে হবে
দম্ভভরে জমিনে চলাফেরা করা যাবে না। যে কোনো বিষয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার বিষয়টি শেখাতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
‘পদচারণায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৯)
. বাবা–মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে
সন্তানের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনকারী বাবা-মায়ের জন্য এটিও করণীয় যে, তাদেরকে বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ববোধ শেখাতে হবে। বাবা-মার সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, সে সম্পর্কে তাদের ধারণা সুস্পষ্ট করতে হবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার শিক্ষা দিতে হবে। এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের একাধিক স্থানে মহান আল্লাহ এ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এভাবে-
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ
‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দুই বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)
অন্য আয়াতে শিরকমুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানের দায়িত্ববোধ কী হবে, তা তুলে ধরেছেন এভাবে বলেন শিরকমুক্ত থেকে বাবা-মার প্রতি দায়িত্ব পালনে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا
‘আর ইবাদত কর আল্লাহর, তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না। বাবা-মার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, ইয়াতিম-মিসকিন , প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্ বিতজনকে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)
. সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের জন্য দোয়া শেখাতে হবে
আল্লাহর কাছে নিজ নিজ সন্তান-সন্তুতির জন্য এভাবে বেশি বেশি দোয়া করার বিকল্প নেই। যেমনটি মহান আল্লাহ তাআলা শিখিয়েছেন-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা হাবলানা আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিল–মুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের স্ত্রীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদের মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সন্তান-সন্তুতিকে উত্তম শিক্ষা ও আদর্শে বড় হওয়ার তাওফিক দান করুন। দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের উপকারে আসার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply