রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিউজ ডেস্ক: সমাজে পারস্পরিক সুন্দর সহাবস্থান ও সুন্দর আচরণ সুন্নত। যারা সুন্দর সহাবস্থান ও সুন্দর আচরণের বিপরীতে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে তারা আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘কেয়ামতের দিন সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বেশি ঘৃণিত হবে, যার খারাপ ব্যবহারের কারণে মানুষ তার সঙ্গে মেলামেশা করা থেকে বিরত থাকবে।’
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবি হজরত আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন-
হে বৎস! তোমার পক্ষে যদি সম্ভব হয় তুমি সকাল সন্ধ্যা এমন অবস্থায় অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো প্রতি বিদ্বেষ নেই। কারণ এটি আমার সুন্নাহ। আর যে আমার সুন্নাহকে জিন্দা করে সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে, সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে। (তিরমিজি ২৬৭৮)
পরস্পরের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার ও সহাবস্থানের ব্যাপারে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই সতর্ক ছিলেন এবং অন্যদেরকেও সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। হাদিসের একাধিক মূল্যবান বর্ণনা থেকে তা প্রমানিত। তাহলো-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার জন্য অনুমতি চাইলে তিনি বললেন, গোত্রের কতই না খারাপ লোক। এরপর নবিজি বললেন, (তাকে) আসতে দাও! যখন সে ভিতরে এলো তার সঙ্গে তিনি (নবিজি) নম্রভাবে কথা বললেন (সে চলে গেলে) হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এ ব্যক্তির সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন, অথচ এর আগে আপনি তার সম্পর্কে অন্যরকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বললেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে খারাপ হবে, যাকে মানুষ তার অশালীন কথার ভয়ে ত্যাগ করেছে।’ (আবু দাউদ, বুখারি, মুসলিম)
২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপীষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।’ (আবু দাউদ, বুখারি, তিরমিজি)
৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আয়েশা! সবচেয়ে খারাপ মানুষ তারা; যাদেরকে মানুষ সম্মান করে শুধু তাদের জিহ্বার অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার জন্য।’ (আবু দাউদ, বুখারি, আদাবুল মুফরাদ)
৪. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো ব্যক্তি এসে কানে কানে কথা বললে সে তার কান না সরানোর আগে তাঁকে কখনো নিজের কান সরিয়ে নিতে দেখিনি। আর কোনো ব্যক্তি তার হাত ধরলে যতক্ষণ সে হাত না ছাড়তো ততক্ষণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত সরাতেন না।’ (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
৫. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসার অনুমতি চাইলে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘গোত্রের নিকৃষ্ট ভাই। এরপর লোকটি প্রবেশ করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেন। লোকটি চলে গেলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকটি যখন প্রবেশের জন্য আপনার অনুমতি চেয়েছিল আপনি তখন তার সম্পর্কে বলেছিলেন, গোত্রের নিকৃষ্ট ভাই; কিন্তু প্রবেশ করলে আপনি তার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়েশা! মহান আল্লাহ অশালীন ভাষীকে ভালবাসেন না।’ (আবু দাউদ)
মনে রাখতে হবে
কেয়ামতের দিন সুন্দর আচরণকারী প্রতিটি কর্ম ভারী ও মুল্যবান হবে। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটিই ঘোষণা দিয়েছেন। হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ شَيْءٍ يُوضَعُ فِي الْمِيزَانِ أَثْقَلُ مِنْ حُسْنِ الْخُلُقِ وَإِنَّ صَاحِبَ حُسْنِ الْخُلُقِ لَيَبْلُغُ بِهِ دَرَجَةَ صَاحِبِ الصَّوْمِ وَالصَّلَاةِ
‘কেয়ামতে দিন কর্ম বিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে (মানুষের) সুন্দর আচরণ। (শুধু তা-ই নয়) আর নিশ্চয়ই সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই (নফল) নামাজ ও (নফল) রোজা পালন করার সাওয়াব অর্জন করবে।’ (তিরমিজি, মাজমাউয যাওয়াইদ, জামে)
মানুষের এ ছোট্ট জীবনে পরস্পরের সঙ্গে উত্তম আচরণ করাই সমীচীন। এটি মানুষের কাছে মানুষের অধিকার। পবিত্র কোরআনুল কারিমের নির্দেশও এমনই। যা প্রতিটি মানুষের জন্য পালন করা জরুরি। আর তাহলো-
لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰهَ ۟ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا
‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার তথা সুন্দর আচরণ করবে এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলবে।’ (সুরা বাকারা: ৮৩)
সুতরাং মানুষ যত খারাপই হোক না কেন তার সঙ্গেও উত্তম আচরণের শিক্ষা দেয় ইসলাম। এটি ইসলামের সৌন্দর্য ও আদর্শ। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুমহান আদর্শ। ইসলামের এ সৌন্দর্য ও আদর্শ সব মানুষের জন্য অনুসরণ ও অনুকরণ যোগ্য।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমাকে কোরআন-সুন্নাহর যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণে আমল করার তাওফিক দান করুন। পরস্পরের সুন্দর সহাবস্থান ও উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply