শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন

অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাবমেরিন বিক্রির পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র

নিউজ ডেস্ক: প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১৮ মাস আগে পারমাণবিক শক্তিসমৃদ্ধ সাবমেরিন বিক্রির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এবার এ পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছে দেশগুলো। স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পয়েন্ট লোমা নৌ ঘাঁটিতে মিলিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানেস।তারা জানান ‘এইউকেইউএস’ চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি পারমাণবিক সাবমেরিন কিনবে। ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘মুক্ত ও স্বাধীন’ অবস্থা অক্ষুন্ন রাখার উদ্দেশ্যে এ চুক্তি করা হয়।

প্রথমে তিনটি সাবমেরিন কেনার পর ২০৩০ সালে অস্ট্রেলিয়া চাইলে আরও দু’টি সাবমেরিন কেনার চুক্তি করতে পারবে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন তারা। এ চুক্তির মধ্যে আরও রয়েছে, এ তিন দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষমতা, হাইপারসনিক অস্ত্র ও অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির শক্তি বৃদ্ধিতে একে-অপরকে সহায়তা করবে। ক্যালিফোর্নিয়ার পয়েন্ট লোমা নৌ ঘাঁটিতে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ইতিহাসের এক নতুন মোড়, যেখানে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং স্থিতিশীলতার বার্তা কয়েক দশক ধরে প্রত্যাশিত শান্তি আনয়নের চেষ্টায় প্রভাব রাখবে। আমি আপনাদের জাহাজের সাথী হতে পেরে গর্বিত।’ অপরদিকে অজি প্রধানমন্ত্রী আলবানিস বলেছেন, ‘গত ৬৫ বছরে প্রথম এবং ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক তথ্য শেয়ার করেছ। আমরা এ জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার অবৈধ হামলা, চীনের ক্রমবর্ধমান দৃঢ়তা এবং ইরান ও উত্তর কোরিয়ার অস্থিতিশীল মানসিকতার’ কারণে উদভূত চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘এই নতুন চ্যালেঞ্জের মুহূর্তে আগের চেয়ে বর্তমানে তাদের সামরিক শক্তিবৃদ্ধি আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে এ চুক্তির বিরোধীতা করেছে চীন। বেইজিং অভিযোগ করেছে এ তিন দেশ স্নায়ু যুদ্ধের মানসিকতা নিয়ে চলছে। যা এ অঞ্চলে দ্বন্দ্ব তৈরির ঝুঁকি আরও বাড়াবে। বেইজিংভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দি মোক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেছেন, এটি ‘অস্থিতিশীলকর’ সিদ্ধান্ত। এটি আরও প্রমাণ করছে ‘চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র চিন্তিত ও ভীত।’

সোমবার সাবমেরিন বিক্রির যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এটি আসলে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। এটিতে কয়েকটি ধাপ রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়া মার্কিনিদের পারমাণবিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান নিতে পারবে। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায়, অস্ট্রেলিয়ার সামরিক এবং বেসামরিকরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নৌবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটিতে যোগ দেবেন। এছাড়া সামনের বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের পারমাণবিক সাবমেরিনগুলো অস্ট্রেলিয়ার বন্দরগুলো আগের তুলনায় বেশি নিয়ে যাবে।

এরমাধ্যমে অস্ট্রেলিয়াকে অত্যাধুনিক এ সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণ ও চালানো শেখানো এবং অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করা হবে। এরপর ২০৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের অনুমোদন সাপেক্ষে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভার্জিনিয়া ক্লাসের তিনটি সাবমেরিন বিক্রি করা হবে। যেগুলোর একেকটির দাম পড়বে ৩ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রযুক্তি দিয়ে সাবমেরিন তৈরি শুরু করবে। যুক্তরাজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সাবমেরিন তৈরি সম্পন্ন করবে। অস্ট্রেলিয়াও তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে। সব কিছু সম্পন্ন হলে ২০৪০ সালের শুরুর দিকে এগুলো অস্ট্রেলিয়ার নৌ বাহিনীর কাছে দেওয়া হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published.

Design & Developed BY N Host BD